Menu

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতিচেতনা, মানুষ এবং ইকোক্রিটিসিজম

(1 Customer Review)

In Stock

Additional information

লেখক

প্রকাশ

Share:

Description

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতিচেতনা

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতিচেতনা, মানুষ এবং ইকোক্রিটিসিজম

শ্রীতন্বী চক্রবর্তী

“ইকোক্রিটিসিজম” শব্দটি উইলিয়াম রুকার্টের ১৯৭৮ সালের প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ “Literature and Ecology: An Experiment in Ecocriticism”-এ ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রায় ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের তত্ব এবং সমালোচনামূলক শব্দভাণ্ডারে এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছু আলোচনা হয়নি বললেই চলে। “ইকোক্রিটিসিজম” হল একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি বা আন্তঃবিষয়ক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহিত্য এবং পরিবেশের অধ্যয়ন, যেখানে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গতিপ্রকৃতি এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা পরিবেশ এবং মানুষের অবস্থানগত দিকগুলি বিশ্লেষণ করতে একত্রিত হয় এবং সমসাময়িক পরিবেশগত পরিস্থিতির সংশোধনের জন্য যা কিছু সম্ভাব্য সমাধান, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। ইকোক্রিটিসিজম শুধুমাত্র প্রকৃতিবিষয়ক অধ্যয়ন নয়, বরং তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের দৈনন্দিন কাজগুলির সম্পর্ক, প্রক্রিয়া এবং সিস্টেমগুলি যা একাধারে পরিবেশগত এবং অন্যদিকে সাংস্কৃতিক। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কার্ডিনাল স্ট্রিচ কলেজের থমাস কে. ডিনের একটি উক্তি:
“Eco-criticism is a study of culture and cultural products (art works, writings, scientific theories, etc.) that is in some way connected with the human relationship to the natural world. Eco-criticism is also a response to needs, problems, or crises, depending on one’s perception of urgency.”
ফলত, ইকোক্রিটিসিজম শব্দটির সাথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়ভাবেই সাংস্কৃতিক পণ্যগুলির (শিল্পকর্ম, লেখা, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব) চর্চা যা প্রাকৃতিক জগতের সাথে মানুষের সম্পর্কের সাথে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত, এই বিষয়গুলি অন্তৰ্নিহিতভাবে উল্লেখিত রয়েছে।
বাংলা কবিতায় ইকোক্রিটিসিজম নিয়ে আলোচনা, বিশেষত পাঁচের দশকের কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতি, ইকোক্রিটিসিজম এবং মানুষ এই সবকিছু নিয়েই এই প্রবন্ধে বেশ কিছু দিক বিস্তারিতভাবে বলতে চেয়েছি। যদিও পাঁচের দশকের প্রথম দিকে নীরেন্দ্রনাথকে নতুন কবি হিসেবে চিহ্নিত করা হতেই পারে, তবুও তাঁর কবিতার সাবলীল ভাষা, আড়ষ্টতাহীন সারল্য নিঃসন্দেহে বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে একটি সুদূরপ্রসারী ইঙ্গিত বহন করে চলেছিলো সেই সময়। একটি অশান্ত যুগের কোলাহলে পরিপূর্ণ এক পরিবেশে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘুমিয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে, প্রকৃতির সাথে মানবরূপের দগ্ধচেতনার সামঞ্জ্যস্য রাখতে গিয়ে কবি লেখেন:
“কাঁচ-রোদ্দুর, ছায়া-অরণ্য, হ্রদের স্বপ্ন।
আকণ্ঠ নিস্তেজ তৃপ্তি, ডোরাকাটা ছায়া সরল;
বনে-বাদাড়ে শত্রু ঘোরে,
তাজা রক্ত, – শয়তান অব্যর্থ।” (“কাঁচ-রোদ্দুর, ছায়া-অরণ্য”)
আরও পড়ুন-ধর্মীয় দৃষ্টিতে মানবজাতির উদ্ভব ও বিকাশ
[ইকোসক্রিটিসিজমের প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হল প্রকৃতি এবং পরিবেশগত দিকগুলির সাথে সমাজের ব্যক্তিরা কীভাবে আচরণ করে এবং প্রতিক্রিয়া জানায় তাতে মনোযোগ দেওয়া। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশগত ধ্বংস এবং প্রযুক্তি বৃদ্ধির উপর অননুভবনীয় সামাজিক জোর দেওয়ার কারণে ইকোক্রিটিসিজমের এই রূপটি অনেকাংশেই বর্ধিত হয়েছে। দৃশ্য, শ্রাব্য, চলমান এবং ঘটমান জগৎের সবকিছুর সাথেই কবি নিজের একাত্মবোধকে জাগিয়ে তুলেছেন। তিনি তাঁর বেশ কিছু সংখ্যক কবিতাতেই পৃথিবীর অসুস্থতার দিকটি তুলে ধরেছেন, সময়ের জটিলতা আর মানুষের জীবনের নগ্ন বাস্তবতার দিকগুলি প্রকাশ পেয়েছে কবিতাগুলির ছত্রে ছত্রে। আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্টের “স্প্রিং পুলস” কবিতায় ঠিক যেরকম ছায়া-অরণ্য, আদ্র প্রকৃতির সংস্রবে হ্রদের জল গাছপালা, ঝোপঝাড়, ফুল, পাতায় জীবন সঞ্চার করতে করতে শুকিয়ে যায়, ঠিক সেরকমই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতাতেও ছায়া-অরণ্য, হ্রদের স্বপ্ন আকণ্ঠ এক আঁজলা তৃপ্তিও দিতে সক্ষম হয় না। কবিতাটিতে পৃথিবীর হিংস্রতা, মানুষের বর্বরতা প্রকট, মানবসন্তান সেখানে শান্তিবিমুখ:
“ঝানু আকাশ ঝুঁকে পড়ে অবাক।
কাঁচা চামড়ার চাবুক হেনে
ছিঁড়ে টেনে খেলা জমছে;
এরা কারা, এ কী করছে?” (“কাঁচ-রোদ্দুর, ছায়া-অরণ্য”)
কবির বেশ কিছু কবিতা এই পৃথিবীর জটিলতা নিয়ে লেখা হয়েছে- ‘এশিয়া’ কবিতায় ‘খসে পড়ে জীর্ণ রাজ্যপাট’, অথবা যখন তিনি ‘শিয়রে মৃত্যুর হাত’ কবিতায় লিখছেন:
“শিয়রে মৃত্যুর হাত। সারা ঘরে বিবর্ণ আলোর স্তব্ধ ভয়।
অবসাদ। চেতনার নির্বোধ দেয়ালে
স্তিমিত চিন্তার ছায়া নিবে আসে।”
একাধারে রয়েছে বাস্তব জীবনের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি, প্রকৃতির সংহারপূর্ণ রূপ, ইকোক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে ‘মাঠ, নদী, বন’ ক্ষনিকের জন্য শান্তিস্নাত হলেও রয়ে যায় ফাঁকা হওয়া, এক হওয়া বিভ্রম। শান্তি চলে গিয়েছে, চিন্তাও স্তিমিত, চারপাশ অস্বস্তিকর, বেঁচে থাকা, আত্মিক নির্ভরতা সবকিছুই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।যদিও, এত হতাশার মধ্যেও কবি জানেন জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রেমহীন, উত্তাপহীন নয়। ইকোক্রিটিসিজম বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি, বিশ্বব্যাপী মহামারী, উষ্ণায়ন নিয়ে কাজ করে, বায়ু দূষণ, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং চারপাশে অন্যান্য পরিবেশগত সঙ্কটের মধ্যেও মানুষের নিরন্তর লড়াইয়ের সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করে। যে কোনো বিভাজন, যে কোনো নেতিবাচক পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়ে মানুষ যখন থাকার জায়গা, স্বদেশ, এবং দেশের পরিবেশ-ধারণা হিসাবে সহজ অনুমানকে বদলে দেয়, তখন একের পর এক বৃত্ত সৃষ্টি হতে থাকে, কাব্যিক বৃত্ত, মায়াবী বৃত্ত, কঠোর বাস্তবের প্রতিচ্ছবি আর মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বৃত্ত। জীবনের তপ্ত, পরিশ্রান্ত প্রান্তরে অবতীর্ণ হয়ে কবি বলেন:
“এসো, এই মাঠের উপরে
খানিক সময় বসে থাকি,
এসো, এই রৌদ্রের আগুনে
বিবর্ণ হলুদ হাত রাখি।” (“রৌদ্রের বাগান”)
কোথাও সময় এসে থমকে দাঁড়ায়, পৃথিবীর রৌদ্রার্পিত চিত্রে কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে কবি তার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে কিছুটা মুহূর্ত সংলাপহীনভাবে কাটাতে চান, রৌদ্রের আগুন আর বিবর্ণ হলুদ হাত একাকার হয়ে যায়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নীল নির্জন’ (প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে) যেখানে নগর এবং শহরের রূঢ় বাস্তবতার এক বহুমাত্রিক পরিচয় পাওয়া যায়। স্বাধীনতা, দেশভাগ, সারা বিশ্বের মানুষ একটি গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলো, বেকারত্বের ক্রন্দনের সাথে মিলেমিশে যাচ্ছিলো কলকারখানার যাবতীয় ধুলো, ময়লা, শোষণ আর ষড়যন্ত্র। যান্ত্রিক দৈনন্দিন শহুরে জীবনের ঠিক অন্য এক প্রান্তে পরিবর্ধিত হচ্ছিলো প্রকৃতির রামধনু সৃষ্টির খেলা। ইকোক্রিটিসিজমের একটি অনন্য সমন্বয় জীবন ও প্রকৃতির এক অনবদ্য মিশেলকে পাঠ করবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে।এই নতুন ইকো-থিওরি বৈশ্বিক পরিবেশগত দিকগুলি নিয়ে সাড়া দেয়, সঙ্কট এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যাগুলিকে সম্বোধন করে, বিশেষ করে সাহিত্যে মূল্যবোধগুলি পরীক্ষা করে তার পাঠ্য, গভীর পরিবেশগত প্রভাবগুলিসহ। ইকোক্রিটিসিজম একটি পৃথিবী-কেন্দ্রিক/ পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি নেয় সাহিত্য এবং সাহিত্যসমালোচনার অন্তর্গত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। “হাতে ভীরু দীপ” কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ লিখছেন প্রকৃতির কথা, পাহাড়ের কথা, ঢালু জমির কথা, উন্মাদ হাওয়ার বশ্যতা স্বীকার করেও এগিয়ে চলা জীবন-পরিচয়ের এক দুর্নিবার আকাঙ্খায়। ‘হেলংয়ের পাহাড়’, ‘পিপলকোঠির চড়াই’, ‘মানাগাঁও’, ‘পাহাড়িয়া নদী’ উদ্বেল হয়ে মেতে ওঠে কবিতার ছন্দে, তৃষ্ণার উপলব্ধিতে। কবিতায় কবি বারবার বলেন তিনি এসেছেন সে যেন জানতে না পারে, গ্রামের পাহাড়িয়া পথের চড়াই-উৎরাই, বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে, নির্জন পাকদন্ডী বেয়ে কবির চরিত্রটি নিচে নেমে যায়।
আরও পড়ুনজীবনচর্চায় কাব্যের স্থান
ইকোক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণে শহর-গ্রামের অবিন্যস্ত সংলাপ ছাড়িয়েও প্রবল হয়ে ওঠে কবির আবদ্ধতাভীতি, কোনো ভণিতা ছাড়াই শহরের ভিড়, চিৎকার, পাশবিক উল্লাস, নিয়ন বাতির চমক, এই সবের কারণে তার শহরে ফেরার পথটি অতটা চমকপ্রদ হয়ে ওঠেনা বা কোনোরকম ভালোবাসার সঞ্চারণ করতে উদ্যত হয় না। উন্নয়নেরও রকমফের হয়, শহরের সহজলভ্যতা, মানুষের আবাসস্থল ও সাংস্কৃতিক জটিলতার বিষয়গুলির সাথে সাথেই শহুরে রুক্ষতার তাৎপর্যটিও অবশ্যই লক্ষণীয়। হাওয়ার দুপুর, মানুষের আবাসস্থল, নগরায়ন প্রক্রিয়া এবং তার পরিবেশগত দিকগুলির পরিকাঠামো কোনো না কোনোভাবে মানুষের বেঁচে থাকার অঘোষিত লড়াইকে কোনো একটি বিশেষ ব্যবস্থার মধ্যে ফেলে না। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাই তাঁর কবিতায় সেই লড়াইগুলির বিন্যাস সাজান, কাব্যিক ল্যান্ডস্কেপে তুলে ধরেন শহুরে অস্পৃশ্যতার রোজনামচা, বদ্ধভূমির মধ্যেও কখনো কখনো উর্বর জমিতে ফুটে ওঠে ভালোবাসার নিঃস্বার্থ গোলাপ। “তোমাকে বলেছিলাম” কবিতায় তিনি নিজের প্রিয়তম মানুষটির কাছে ফিরে আসার সংকল্প জানাচ্ছেন, ঝালোডাঙার বিল পেরিয়ে, হলুদ ফুলের মাঠের উপর দিয়ে তিনি ফিরবেন, মনের আবছা মনিকোঠায় এখনো সেই ফিরে আসার তাগিদ বিদ্যমান:
“তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে রেখে,
ঝালোডাঙার বিল পেরিয়ে,
হলুদ-ফুলের মাঠের উপর দিয়ে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।” (“তোমাকে বলেছিলাম”)
উত্তরআধুনিকতা প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রকৃতির নির্মাণ ও বিনির্মাণ একটি মৌলিক নীতি হিসেবে চোখে পড়ে,পোস্টস্ট্রাকচারালিজম, এবং তত্ত্বের অন্যান্য ফর্মও বেশ কিছু ক্ষেত্রেই একই অনুভূতি ভাগ করে নেয়। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের সমীকরণটা ঠিক কিরকম? সাহিত্যের অলিন্দে সেটি কিভাবে চোখে পড়ে? রিপ্রেসেন্টেশন – বিষয়টির অধীনে তাহলে ইকোক্রিটিক্যাল থিওরিটি কিভাবে আলোচিত হবে? এই প্রসঙ্গে তাত্বিক ডানা ফিলিপ্স তার একটি প্রবন্ধ “Ecocriticism, Literary Theory, and the Truth of Ecology”- তে বলেছেন:
“Ecocritical analysis of literary texts then proceeds haphazardly, by means of fuzzy concepts fashioned out of borrowed terms: words like “ecosystem,” “organism,” and “wilderness” are used metaphorically, with no acknowledgment of their metaphorical status, as if literary, ecological, and environmental ways of speaking were a lot more compatible than they are, and as if their differences could safely be overlooked. English department colleagues who do not use the same metaphors, those who see no important or decisive connections between “the wilderness of signs” and the wilderness of pines, become the objects of scorn.” (Philips, 4)
ইকোক্রিটিক্যাল তাত্বিক বৈশিষ্টগুলি জীববৈচিত্র, বাস্তুতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়গুলির সাথেই মানবজীবনের ভাবপ্রবণতার আঙ্গিকগুলি ইকোক্রিটিসিজমের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। “হলুদ আলোর কবিতা”-য় কবি বলছেন:
“দুয়ারে হলুদ পর্দা। পর্দার বাহিরে ধুধু মাঠ
আকাশে গৈরিক আলো জ্বলে।
পৃথিবী কাঞ্চনপ্রভ রৌদ্রের অনলে
শুদ্ধ হয়।
কারা যেন সংসারের মায়াবী কপাট
খুলে দিয়ে ঘাস, লতা, পাখির স্বভাবে
সানন্দ সুস্থির চিত্তে মিশে গেছে। শান্ত দশ দিক।
দুয়ারে হলুদ পর্দা। আকাশে গৈরিক
আলো কাঁপে। সারাদিন কাঁপে।”
কাঞ্চনপ্রভ, হলুদ, সোনার রঙে রাঙা রোদ, রোদের আগুন, তারপরে সুস্থির চিত্ত আর দুয়ারে হলুদ পর্দা আর বাইরে গৈরিক আলোর পুনরাবৃত্তি দিয়ে কবিতাটি এগিয়ে চলে তার নিজস্ব ভঙ্গিমায়। একাধারে সংসার, পৃথিবীর তাপ, রোদের রোষানল, হলুদ এবং কমলা রঙের সংমিশ্রণ, কবিতায় আলো কেঁপে ওঠে বারবার। পরিবেশগত সমালোচনা তাহলে কিসের প্রতিনিধিত্ব করছে? ঘাস, লতা, পাখির স্বভাবের রংগুলি মিলেমিশে যায় পৃথিবীর পথেপ্রান্তরে, কবির আরেক কবিতা “পলাশ ডিহি”-র মতই এই কবিতাটিতেও চারপাশ খাঁ খাঁ শান্ত, স্থলজ পরিবেশের বাস্তববাদী অথবা যন্ত্রগত সচেতনতা যা ছড়িয়ে পড়ছে আপাতদৃষ্টিতে এক সানন্দ, সুস্থির চিত্তে। জীবনানন্দের মতোই কবি পলাশডিহিতে গ্রামে ফিরে আসার কথাটি ব্যক্ত করেন, কিন্ত গ্রামে ফিরলেও সেই অভিজ্ঞতা এখন হয়তো সামগ্রিকভাবে অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। শুধুমাত্র পলাশডিহিই নয়, কোনো গ্রামে ফেরাটাই হয়তো আজকাল কবির পক্ষে নিতান্তই অসম্ভব হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৬ সালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ধ্বংস নিয়ে একটি সনেট লিখেছিলেন ‘সভ্যতার প্রতি’, সভ্যতার বেড়াজালে আবদ্ধ সমগ্র মানবজীবন, এক নিষ্ঠুর, সর্বগ্রাসী সময়ের কথা অনেকদিন আগেই বিশ্বকবি তুলে ধরেছিলেন, অনন্তের প্রতি আস্থা রাখতে খুঁজে নিতে চেয়েছিলেন সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ থেকে আলোর রশ্মি:
“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান,
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান…”
ইকোক্রিটিক্যাল পর্যালোচনা তো বারংবার সেই কাষ্ঠ, প্রস্তর, নব্যসভ্যতার বিলাসব্যাসন আর ভোগের বাইরে গিয়েও প্রকৃতির অকলুষিত সত্তাটিকে নিরুপদ্রব, নির্বিকারভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছে। নীরেন্দ্রনাথ যন্ত্রের উদযাপনের পাশাপাশিই শিল্প প্রবর্তনের অনিয়ন্ত্রিত দিকগুলির নিন্দা করেন, কবিতার পংক্তি হয়ে ওঠে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এক অনবদ্য তাগিদ। “মৌলিক নিষাদ” কবিতায় তিনি লিখছেন:
“এই এক আশ্চর্য সময়।
যখন আশ্চর্য বলে কোনো-কিছু নেই।
যখন নদীতে জল আছে কি না-আছে
কেউ তা জানে না।
যখন পাহাড়ে মেঘ আছে কি না-আছে
কেউ তা জানে না।
পিতামহ, আমি এক আশ্চর্য সময়ে বেঁচে আছি।
যখন আকাশে আলো নেই,
যখন মাটিতে আলো নেই,
যখন সন্দেহ জাগে, যাবতীয় আলোকিত ইচ্ছার উপরে
রেখেছে নিষ্ঠুর হাত পৃথিবীর মৌলিক নিষাদ–এই ভয়।”
পিতামহকে কবি আরো প্রশ্ন করছেন, তাঁর আকাশ কতখানি নীল ছিলো, কারণ কবির আকাশ তো নীল নয়। তিনি আক্ষেপ করে বলছেন এক নিষ্ঠুর সময়ে তিনি বেঁচে আছেন, যেখানে আকাশ এবং মাটি অন্ধকার, আশপাশে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে মৌলিক নিষাদ। রাত্রির নিকষ কালো আকাশে একটিও তারা ওঠেনি, প্রত্যেকটি মুহূর্তে কবির মনে হচ্ছে তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। কবি এখানে দ্রষ্টা, তিনি শুধুমাত্র কল্পনার ফুল-বিকশিত রূপটি না দেখে এক অস্থির সময়ের স্থবিরতা উপলব্ধি করে চলেছেন প্রতিক্ষণে। আমেরিকান কবি এজরা পাউন্ড তাঁর “দ্য ট্রি” কবিতায় ঠিক যেমন থমকে দাঁড়িয়ে, গাছের মতো নিশ্চল হয়ে ইতিপূর্বে অদেখা সত্যগুলিকে উন্মোচন করতে পারছেন, আর বলছেন:
“I stood still and was a tree amid the wood,
Knowing the truth of things unseen before;
Of Daphne and the laurel bow
And that god-feasting couple old
that grew elm-oak amid the wold.”
আমরাও দেখতে পাচ্ছি কবি নীরেন্দ্রনাথ জীবনের কৃত্রিমতাকে ভীষণভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন। প্লাস্টিক তাঁকে আশ্বাস দেয়, জীবনের আস্বাদ গ্রহণে তিনি অক্ষম। “প্লাস্টিক, তোমার দিকে” কেবলমাত্র কারখানায় তৈরী হওয়া একটি যৌগ নয়, বরং নানা রঙের সমাহারেও যেটি কৃত্রিমতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। কবি এই কবিতায় বলছেন:
“…লাল নীল বেগুনি সবুজ
রূপালী জাফরান
রঙের বিভাসে বিশ্বপূর্ণ করে দিতে।
যে রঙ পাইনি তুমি এনে দেবে…”
প্রকৃতির রসদ আহরণ করেও পৃথিবী যখন কৃত্রিমতার প্রলেপ পরে থাকে, বহুবচনে একটি যুগের বৈশিষ্ট হয়ে ওঠে শুধুমাত্র ভোগবাসনাপূর্ণ, তখন বোঝা যায় যে প্লাস্টিক জীবনকে ক্ষণিকের জন্য ভোলায়, আকাশের গৈরিক রঙ সে এনে দিতে পারে না। এই ভ্যানিটি, বা কৃত্রিমতা, নগর-জীবনের আত্মরম্ভিতা এই সবকিছুকেই কবি এজরা পাউন্ড বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘ক্যান্টো ৮১” কবিতায়:
“The ant’s a centaur in his dragon world.
Pull down thy vanity, it is not man
Made courage, or made order, or made grace,
Pull down thy vanity, I say pull down.
Learn of the green world what can be thy place
In scaled invention or true artistry,
Pull down thy vanity…” (Canto LXXXI)
একটি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম পিঁপড়েও তার নিজস্ব জগতে কল্পিত, আসুরিক শক্তির অধিকারী হয়ে থাকে, কৃত্রিমতা ও আত্মশ্লাঘায় সে বৃহৎভাবেই আত্মবিস্মৃত হয়। পাউন্ড তাঁর কবিতায় বারবার বলছেন, “Pull down thy vanity, I say pull down. Learn of the green world what can be thy place.” যা কিছু সরল, সজীব, সবুজ, তার মধ্যেই প্রকৃত অর্থে বেঁচে থাকার সার্থকতা, শৈল্পিক আবেশ। আধুনিক ইকোক্রিটিক্যাল আলোচনার ব্যাপ্তি বিশাল। ভূমি, ভূমির ক্ষতি এবং বর্জ্য পদার্থ কিভাবে পৃথিবী ধ্বংস করছে সেই নিয়ে আলোচনা, অ্যাসবেসটস এবং সীসা থেকে বিষক্রিয়া, প্রজাতির বিলুপ্তি, পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ, পৃথিবীর উষ্ণায়ন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টগুলির বিনাশ আর ক্ষয়ক্ষতি, এই সবকিছুই ইকোক্রিটিসিজমের অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন-কাব্যে বঙ্গদেশের বিশেষত্ব
আধুনিক ইকোক্রিটিক্যাল আলোচনার ব্যাপ্তি বিশাল। ভূমি, ভূমির ক্ষতি এবং বর্জ্য পদার্থ কিভাবে পৃথিবী ধ্বংস করছে সেই নিয়ে আলোচনা, অ্যাসবেসটস এবং সীসা থেকে বিষক্রিয়া, প্রজাতির বিলুপ্তি, পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ, পৃথিবীর উষ্ণায়ন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টগুলির  বিনাশ আর ক্ষয়ক্ষতি, এই সবকিছুই ইকোক্রিটিসিজমের অন্তর্ভুক্ত। নীরেন্দ্রনাথের কবিতায় মানুষের আশু প্রয়োজন, খাদ্য, বাসস্থান এই সবকিছুর মধ্যে তার জীবনের নান্দনিক দিকটি ক্রমশ হারিয়ে ফেলে। নাগরিক জীবনের ক্লান্তিক্লিষ্ট, দরিদ্র, সহানুভূতিহীন বাস্তবের যাঁতাকলে পড়ে আরো আরো ভঙ্গুর হয়ে যায় ভোটাররা। “বৃষ্টিতে নিজের মুখ” কবিতাটিতে কবি বলছেন:
“অরণ্য, আকাশ, পাখি, অন্তহীন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে-
আকাশ, সমুদ্র, মাটি, অন্তহীন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে-
সমুদ্র, অরণ্য, পাখি, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
যতই ঘোরাও, আমি কী নতুন দেখবো জাদুকর?”
গ্রামের রাস্তায়, মেঘভাঙা বৃষ্টির মধ্যে, গ্রামের সুন্দরীর চাহনিতে, আকাশ, বাতাস, উদ্ভিদের মধ্যে কবিসত্তা বারবার নিজেকেই অনুধাবন করার চেষ্টা করে। জাদুকর তার হাতের আমলকীমালা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেও কবি নিজের পুরোনো রক্তাক্ত মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় মানুষ, সমাজ, প্রকৃতির রূপ অঙ্কনের পাশাপাশি সময় এক প্রধান চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছে। কবিতায় কল্পনার স্বর্গ বা কবিতার অত্যন্ত কুসুমাস্তীর্ণ পথ তৈরী করাটা তাঁর অভিপ্রায় ছিলো না, বিশ্বের আধুনিক কবি টি.এস. এলিয়ট প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যিখানে এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে অনুভব করেন, সমগ্র মানবসভ্যতা waste land-এ পরিণত। ঠিক সেরকমই, দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ছাত্রমিছিল, দারিদ্র্য এই সবকিছুই সময়ের খাতায় চিরাচরিতভাবে লেখা হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতার মাধ্যমে। সদ্য-উন্মোচিত স্বাধীনতার কুঁড়ির সাথে সাথেই নগরায়নের বহুকৌণিক সংলাপ আর কিছু ফিরে পাওয়া আর না পাওয়া তাঁর কবিতাকে নিয়ে যায় এক অনন্য মাত্রায়। সাধারণ, নিতান্তুই আড়ম্বরহীন শব্দগুচ্ছ, প্রতীক, আবহমান কালের ছায়ায় বেড়ে ওঠা মানবিক সত্তা জেগে থাকে নিরন্তর যুদ্ধের পরেও। ক্ষমতার আগ্রাসন, শ্রেণীবিভাজন, সন্ত্রাস কোনোভাবেই সংবেদনশীল কবিমননকে শেষ হয়ে যেতে দেয় না। মাঝেমাঝে কবির কথাতেও হতাশার চিহ্ন ধরা পড়ে, মানুষ সবকিছু খুঁজেও শিরদাঁড়া খুঁজে পাচ্ছে না, সেটি তিনি তাঁর কাব্যিক বর্ণনায় তুলে ধরেছেন- “যদিও সবাই জানে, খুঁজতে গেলেই দেখা যাবে, কারও আজ শিরদাঁড়া নেই।” (“জলে নামবার আগে”)আরেক আধুনিক কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েট্স এই অত্যাধুনিক জগতের উন্মাদনার দিকটি তাঁর কবিতায় অত্যন্ত সুচারুভাবে দেখিয়েছেন। কোনো হঠাৎ ব্যবহৃত শব্দের জাদুবলে নয়, তিনি মানবিক দিক, সোল, আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে তাঁর কবিতা ‘এ প্রেয়ার ফর মাই ডটার’-এ তুলে এনেছেন, বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের অধিকারী নয়, তিনি মনোনিবেশ করেছেন এমন একটি কাজে যেখানে তাঁর আত্মজা বড় হয়েও তার সারল্য ভুলে যাবে না:
“all hatred driven hence,
The soul recovers radical innocence
And learns at last that it is self-delighting,
Self-appeasing, self-affrighting” (Yeats, ‘A Prayer for my Daughter’)
ঘৃণার আগুনে মুহূর্ত ঝলসে ওঠা নয়, কবিতাটি মানবতার প্রতি আস্থা রেখে ভবিষ্যতের জন্য শান্তির প্রশস্তি গেয়েছে। আত্মিক আনন্দ, চেতনা, সহিষ্ণুতা, এ তো বিশ্ববন্দিত কবিদের কবিতার আয়নায় বারেবারে উঠে এসেছে।যেমন “অন্ধের সমাজে একা” কবিতায় নীরেন্দ্রনাথ লিখছেন:
“আমি সেনাপতি। আমি সৈন্য-পরিদর্শনে এসেছি।
কিন্তু তার সেনাপতি, কাহাকে সমরে নেব, কিছুই জানি না।
আমি শুধু দেখতে পাই, দশ লক্ষ যোদ্ধার সভায়
কাহারও কপালে অক্ষিতারকার শোভা নেই;
কপালে গভীর দুই গর্ত নিয়ে সবাই দাম্ভিক দাঁড়িয়েছে।”
যুদ্ধরত সেনার দল, যুদ্ধাকাঙ্খী সময়, অনিবার্যভাবেই যুদ্ধের তড়িৎ-প্রস্তুতি, এ সবেরই মাঝখানে এসে কবি অন্ধের সমাজে একাকিত্ববোধ করছেন। যারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে তারাও দাম্ভিক, অথচ কখন যুদ্ধ হবে, কার যুদ্ধ হবে কবি কিছুই জানেন না। অস্তিত্বের তীব্র সঙ্কট, নাকি অসম্ভব ভীরু পদক্ষেপে জীবনের জল মেপে নেওয়া, নাকি মানুষের ব্যর্থতার কাহিনীর পরতে পরতে নিজেকে ভালো করে চিনতে শেখা? কবির অনুভূতিগুলো কোথাও পরপর জুড়ে গিয়ে এক অসম্ভব সুন্দর চিত্রকল্প তৈরী করতে সক্ষম হয়। তাঁর কবিতায় রক্তের ওপর মাছি ওড়ে, চাঁদের হাসি বিলীন হয়ে যায় প্রেতেপাওয়া উন্মাদনার মতো, ঝকঝকে রূপোলি কইমাছের মতো লাফিয়ে ওঠেন সূর্যদেব। আদর্শবাদী রাজনীতি, সমাজনীতি প্রভূত বিষয়গুলি বেশ কিছু প্রশ্নচিহ্নের সামনে এসে দাঁড়ায়।রোগের লক্ষণ নির্ণয় করা বড়ই কঠিন হয়ে ওঠে আর  বাতাসে অক্সিজেনের পরিবর্তে মানুষ খুঁজে পায় অ্যামোনিয়ার অত্যন্ত উৎকট, ঝাঁঝালো গন্ধ। প্রকৃতি এখানে নিষ্ঠুর, মানুষের অপকীর্তি তাকে মানুষের কাছ থেকে আরো দূরে ঠেলে দিচ্ছে। ভগ্ন আস্তাকুঁড় পেরিয়েও যেখানে ভূমিষ্ঠ হয় দেবশিশু, যীশুজ্ঞানে লালিত হয় মানবশিশু।
তথ্যসূত্র:
১. নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, দে’জ পাবলিশিং , কলকাতা, ২০১০।
২. Yeats, William B. COLLECTED POEMS OF W.B. YEATS. Simon & Schuster, 2008.
৩. Pound, Ezra. The Pisan Cantos. New Directions Publishing, 2003.
৪. Phillips, Dana. The Truth of Ecology: Nature, Culture, and Literature in America. Oxford UP on Demand, 2003.
writer- Assistant Professor, Amity University]
https://www.facebook.com/sreetanwi.chakraborty?mibextid=ZbWKwL

Additional information

লেখক

প্রকাশ

Average Rating

5.00
1 Review
5 star 100%

4 star 0%

3 star 0%

2 star 0%

1 star 0%

1 review for নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতিচেতনা, মানুষ এবং ইকোক্রিটিসিজম

5 Star
100%
1 review(s)
4 Star
0%
0 review(s)
3 Star
0%
0 review(s)
2 Star
0%
0 review(s)
1 Star
0%
0 review(s)

Reviewed by 01 customer(s)

Sort by


  • Warning: Attempt to read property "ID" on bool in /home/prabandh/public_html/wp-content/plugins/shopengine-pro/modules/avatar/avatar.php on line 78
    Avatar

    Felix Meyer

    Thank you for sharing your precious knowledge. Just the right information I needed. By the way, check out my website at Webemail24 about Search Engine Optimization.

    July 9, 2024

Leave feedback about this

Your email address will not be published.

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতিচেতনা, মানুষ এবং ইকোক্রিটিসিজম

Download(281 KB)

Recently Viewed Products

No recently viewed products to display