Warning: Undefined array key "options" in /home/prabandh/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/theme-builder/widgets/site-logo.php on line 124 টুসু পরব - Prabandha Archive
Skip to content
“টুসু ” , মানভূম ও রাঢ় বাংলার ফসল ঘরে তোলার উৎসব বা লৌকিক শস্যোৎসব ৷ধানের তুষ থেকে টুসু কথাটা এসেছে ৷ কিন্তু , মানভূমে এলাকায় তুষ কথাটার প্রচলন আগেও ছিল না , এখনও নেই ৷ কুড়মি ও ভূমিজরা তুষকে আগড়া বা ভুষা বলেন ৷আবার কেউ বলেন পুষ্যা বা তিষ্যা নক্ষত্র থেকে হয়েছে এর নাম ৷ মধ্যপ্রাচ্যের “টেসু ” দেবীর মত ৷ পৌষ মাসে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে ধান ওঠে ৷ টুসু কৃষিকেন্দ্রিক সভ্যতার অন্তর ও বাইরের ফসল ৷শস্যদেবী টুসু আসলে রাজকন্যা ৷মনে করা হয় তুসু বা টুসু ছিলেন কুড়মি বংশীয় রাজ বা জমিদার কন্যা৷সুন্দরী টুসুর রূপে মুগ্ধ হয়ে এক অ-মাহাতো জমিদার পুত্র তাঁকে জোর করে বিয়ে করতে গেলে টুসু সূর্বণরেখার জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন ৷
ঐ জায়গাটি “সতীঘাট ” হিসাবে বিখ্যাত ৷তবে , কুড়মিরা বলেন এর সাথে টুসুর সম্পর্ক নেই ৷ কারণ , কোন মানুষ গরু পরবের দিন মারা গেলে কুড়মিরা পরব করে না ৷তবে , টুসু হয়ে উঠেছে মানব ও প্রকৃতির মিলিত বিগ্রহ , মানভূমি সহ পশ্চিমাঞ্চলের ও জঙ্গলমহলের কৃষিভিত্তিক লৌকিক দেবী ৷ ক্ষেত্র লক্ষ্মী ৷দুর্গাপুজোর মত সেখানকার প্রধান পার্বন ৷ কুড়মি , ভূমিজ সহ জনগোষ্ঠীর প্রাণের দেবী ৷
বাংলার লৌকিক উৎসব , হিন্দু দেবদেবী , পুজো পাবর্ণ ,ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লেখা “সনাতনী কৃষ্টিকথা ” ও “হিন্দু ধর্ম ” বই দুটি পড়ুন ও পড়ান ৷ বই দুটি পেতে আমার ৯৭৩২২১৭৪৮৯ নম্বরে ৬০০ টাকা ফোন পে বা গুগুল পে করে হোয়াটস এপে নিজের পুরো ঠিকানা পাঠান ৷ বইগুলি বাড়ীতে ক্যুরিয়ারে পৌঁছে যাবে ৷ এই পুজো শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির পর দিন থেকে মকর বা পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত ৷কুমারী মেয়েদের এক মাসের সান্ধ্য পাবর্ণ ৷ টুসু উৎসবের শেষ চারদিন হল যথাক্রমে চাঁউড়ি , বাঁউড়ি , মকর ও আখান ৷মকর পরব বর্ষ বিদায়ের আর আখাইন যাত্রা বর্ষ বরণের পরব ৷অনেক জায়গায় দেবী টুসুর প্রতিমা হয় না ৷ বান্দোয়ান ও খাতড়ায় অশ্ব বাহিনী বা ময়ূরবাহিনী টুসু মূর্তি হয় ৷
[মূর্তির হাতে শঙ্খ , পদ্ম , পাতা ও বরাভয় মুদ্রার কোন দুটি থাকে ৷ একে অনেকে তুষ তুষলি বা তসলা ব্রত বলে ৷ নানা উপাচারে ও আচরণে পালিত এই পরব / উৎসব/ ব্রতর সমাপ্তি হয় পৌষ মাসান্তে মকর স্নানে ৷ একমাসের আনন্দ শেষ হয় টুসু বির্সজন বা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে ৷ বলে ” এতদিন রাখলাম মাকে ,/ গুঁজি কপাট দিয়ে গ ৷৷/আর রাখতে লাল্লাম মাকে ,/মকর আইল লিতে গ “৷ প্রতিদিন তুলসী পিঁঢ়ার পাশে মাটির কোটর বা দিরখায় সন্ধ্যায় ফুল দেয় ৷ তাই , শেষ পৌষালী সন্ধ্যায় মেয়েরা গান গায় ,” তিরিশ দিন রাখি মা, কে তিরিশটিফুল দিয়ে গ ,/ আর রাখত লারব মা, কে , মকর আল্যো লজিকে “৷ কাঁদো কাঁদো চোখে বলে ” আমার বড়ো মনের বাসনা ,/ টুসুধনকে জলে দিব না “৷
আবার টুসু ভাসনে তাঁরা আশাও দেখে “টুসু গেল ভেসে ,/ ধনদৌলত টাকা কড়ি এলো হেসে “৷এই সময় অবিবাহিত ছেলে -মেয়েদের চলে প্রেমপর্ব ৷বির্সজনের আগের দিন সবাই রাত জাগে ৷ মন্দিরাকৃতির বাঁশের চৌদল রঙিন কাগজে মুড়ে ঘাটে গিয়ে হয় বির্সজন ৷ চোখের জলে ঘরের মেয়ে টুসুকে জলে ডুবিয়ে দেয় ৷বক্সে তারস্বরে গান বাজে “আমার টুসু মান করেছে , কথা কইবে না করেছে আড়ি আড়ি আড়ি ” , “বাপের বাড়ী রইবেক টুসু , যাবে না শ্বশুরবাড়ী “৷কিন্তু , বাংলার সংস্কৃতিতে পিতৃকুলের চেয়ে স্বামী বা শ্বশুর কুলের গরিমা অধিক ৷ “মা বাপের কুল নাড়ি চারি / শ্বশুরের কুল গেলাসে ভরি “৷ পয়লা মাঘ গ্রামে গ্রামে হয় গরাম ঠাকুরের পুজো ৷ আইখ্যান যাত্রা ৷পঞ্চকোট না কাশীপুর না ঝাড়গ্রাম কোথাকার এ নিয়ে মতান্তর আছে ৷টুসু পুজোয় কোন পুরোহিত লাগে না ৷ সারা পৌষ মাস ধরে মেয়েরা আদর করে তাঁর পুজো করে ৷তবে , বেশী গুরুত্বপূর্ণ পৌষ মাসের শেষ চার দিন ৷ প্রথম দিন চাঁউড়ি ৷
এদিন ঘরে ঘরে চাল গুঁড়ো করা হয় ৷ঐদিন গোবর-জল ছিটে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা হয় ৷ দ্বিতীয় দিন বাঁউড়ি ৷ ঐদিন ঘরে ঘরে পিঠে পুলি তৈরীর ধূম পড়ে যায় ৷ পুরুলিয়া , বীরভূম , পশ্চিম মেদিনীপুর , ঝাড়গ্রাম , বর্ধমান , বাঁকুড়া , ঝাড়খন্ডের সিংভূম , সরাইকেল্লা খরসোয়া , রাঁচি ,ধানবাদ , হাজারীবাগ ওড়িশার কেওনঝর , ময়ূরভঞ্জ , সুন্দরগড় জেলায় ও আসামের কিছু চা বাগান এলাকার কুমারী মেয়েরা পৌষ সংক্রান্তির দিন নতুন জামাকাপড় পরে রাত জাগে ৷ সবশেষে টুসু বা দোলা ভাসিয়ে নদীতে স্নান করে মুড়ি , তেলেভাজা খেতে খেতে বাড়ী ফেরে ৷ছেলেরা খড় , পাটকাঠি , কাঠ দিয়ে ম্যাড়াঘর তৈরী করে চাঁচর বা ন্যাড়াপোড়ার মত আগুন লাগায় ৷বাংলা ভাষা আন্দোলনে “টুসু গানের” বিরাট অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা ৷ মানভূমকে পশ্চিমবঙ্গে আনার জন্য ভজহরি মাহাতোর নেতৃত্বে হয়েছিল টুসু সত্যাগ্রহ ৷ ঐসময় বিহার সরকার তাই টুসু গান নিষিদ্ধ করেছিল ৷ “শুন বিহারি ভাই , তোরা রাখতে লারবি ডাং দেখাই” ৷ সত্যি মানভূমের এই ভাষা আন্দোলনের
ফলে পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত হয় ! টুসু পরবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার এসব গান ৷ ভনিতা দিয়ে ও ভনিতা ছাড়া দু রকম হয় ৷ ভনিতাবিহীন টুসু গানে মূল টুসু পদ ও টুসু পদের রঙ কখনো মূল পদের অনুসঙ্গে কখনো আলাদা হয় ৷অন্য ধরণের ক্ষেত্রে টুসু পদ থাকে চার চরণের ৷ এর মধ্যে রঙের জন্য নির্দিষ্ট থাকে দুটি চরণ ৷ টুসুতে হয় হরেক গান বাঁধা , গান চর্চা ও গানের লড়াই ৷ অধিকাংশ গান লেখা হয় না ৷ অনেকেই তো পড়াশুনা জানে না ৷
তবু , গান বাঁধতে ও গাইতে পারে ৷ যাতে উঠে আসে সমাজ , সংসার থেকে রাজনীতি ও জীবনবোধের কথা ৷ ” পৌষ মাস পড়ল টুসু / রাজায় মাগে খাজনা / গায়ের গয়না ঘুচাও টুসু /বুঝাও রাজার খাজনা “৷ অসাধারণ সমাজ সচেতনতা ! ধর্মীয় অনুসঙ্গে প্রতিবাদের ভাষা ৷ প্রতিবাদী গান ৷ এইতো বাংলার জীবনমুখী গান ৷গানে থাকে মেয়েলি চাহিদা , কলহ ও ঈর্ষা ৷ উঠে আসে পণপ্রথা , বধূ নির্যাতন , সাক্ষরতা , মহিলা গোষ্ঠী সম্বন্ধে সচেতনতার প্রচার ৷]
Leave a Reply