Warning: Undefined array key "options" in /home/prabandh/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/theme-builder/widgets/site-logo.php on line 124 ঈশ্বর ও মনের আয়না - Prabandha Archive
Skip to content
ঈশ্বর …এক বহূজাতিক পণ্যের নাম ।দারুণ তার মার্কেটেবিলিটি। বায়বীয় !’ হ্যা়ঁ ‘বা “না “এর মাঝে ভ্রাম্যমাণ ।যার যার সুবিধামতো। এদিকে যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ম চর্চা ততই যেন আমরা কেন্দ্রচ্যুত হচ্ছি। ঈশ্বর,দেবতা ,গড বলার সঙ্গে সঙ্গেই দুটো ধারনা হয় ।বিশ্বাস ও অবিশ্বাস বা নাস্তিক ও আস্তিকবাদ । এর মাঝামাঝি আরেকটি দল আছে । এ্যাগনষ্টিক — যারা হ্যাঁ বা না কোনো ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামান না । পরিস্থিতি ক্রমশ নেতিবাচক ।জীবন যুদ্ধ কঠিনতর ।এখন মানুষ তাই প্রমাণহীন ও অস্তিত্ববিহীন ঈশ্বর তত্ত্বে আর বিশ্বাস করতে রাজি নয় । বুদ্ধিজীবি মহলে আমি নাস্তিক বলাটা একটু উত্তরাধুনিকতার পরিচয় ও বটে।
তিনি কি নেপথ্যে থেকে আমাদের কোনো উপকার করেন?দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেন বা দুষ্টের দমন করেন? সব গুলোর উত্তর নিশ্চয়ই না । পৃথিবীতে তাই নাস্তিকবাদীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মুম্বাই আই আই টি র ছাত্রদের মধ্যে মাত্র ৩৯% আস্তিক বাকীদের মধ্যে ২১% সরাসরি নিজেদের নাস্তিক বলেছেন ও বাকী ৩৯% বলেছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁরা মাথা ঘামাননা ।(দি টাইম্ স অফ ইন্ডিয়া ২.৯.১৬)
চীনের শতকরা ৯০ভাগ মানুষ ও হং কং এর ৭০% মানুষ সুনিশ্চিতভাবে নাস্তিক বা ধর্মপরিচয়মুক্ত । ইজরায়েলের সংবাদপত্র “Haaretz”এর মতে নাস্তিকতা ইজরায়েল সমাজে গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত । ইংল্যান্ডে এখন atheist বা নাস্তিকের সংখ্যা খৃষ্টানদের চেয়ে বেশি (২০১৪)।
আস্তিকবাদ বা নাস্তিকবাদ মূলত দুটি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল ।প্রথমত,যুক্তিব্যবস্থা ও দ্বিতীয়ত বিশ্বাস ব্যবস্থা । প্রথমত প্রতিটি মানুষেরই হরমনের নিঃস্বরণে কিছু আবেগ কার্যশীল ।মানুষের যুক্তিবোধও ।আদিমকালেও মানুষ মস্তিষ্কবান ছিলো । এবং সেই সূত্রে কার্য হলে কর্তাও থাকবে এই সহজ যুক্তিতে প্রকৃতির নানা রহস্যময় ঘটনার জন্য ঐশী শক্তির কল্পনা করা হয়েছে ।
নাস্তিকবাদীদের একটি জনপ্রিয় যুক্তি হলো তারা এত দুর্বল মস্তিষ্ক নয় যে, কোনো কাল্পনিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।অর্থাৎ যা দেখি ও যা শুনি তার বাইরে কিছু নেই এটাই মানি।
[এই যুক্তিতে তবে বিপুল পৃথিবী তথা মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ঘটনাপ্রবাহ থেকে যায় অজানা।এমনকি নিজেকেও ।ঈশ্বর ,আত্মা,আত্মচেতন বা ব্রহ্ম কি পৃথক?
সংস্কৃত ব্যকরণে “ঈষা” ধাতুর সাথে “বরচ” প্রত্যয় যোগে ঈশ্বর শব্দের সৃষ্টি।
ঈষা ধাতু অর্থে কতৃত্ব করা ।সুতরাং যিনি সকলের কর্তা ও আশ্রয়দাতা তিনি ঈশ্বর ।
বা লিঙ্গ ভেদে ঈশ্বরী ।
ঈষ যুক্ত বর ,বিশেষ্য পদ ,অর্থে স্রষ্টা ।
অন্যদিকে ‘ভগ’ শব্দটি গুণবাচক ,’বান ‘শব্দের অর্থ অধিকারী ।অর্থাত যিনি গুণের অধিকারী তিনিই ভগবান ।
দেখে নেওয়া যাক ঈশ্বর সম্পর্কে ভিন্ন শাখাগুলির দর্শন কি মতামত পোষণ করে।
আমাদের বেদান্ত প্রচার করে থাকে যে আমাদের সমাজ জীবন ও কর্মক্ষেত্রে ়আমরা যে বিশাল শক্তিপুঞ্জের অভিব্যক্তি দেখতে পাই তা প্রকৃতপক্ষে অন্তর থেকেই উৎসারিত ।অর্থাৎ অন্য ধর্মালম্বীরা যাকে ঐশী শক্তির অন্তঃপ্রকাশ বলে থাকে বেদান্ত তাকেই মানবের ঐ শক্তির বহির্বিকাশ নামে অভিহিত করতে চান ।
অদ্বৈত বাদীদের মতে এই বিশ্বের অধিষ্ঠানস্বরুপ অসীম আত্মাকেই আমরা বলি ঈশ্বর ।মানব মনের অধিষ্ঠান সেই এক অসীম আত্মাকেই আমরা বলি মানবাত্মা ।
আত্মাই ব্রহ্ম।
কেবল বিভিন্ন নামে তা প্রতিত হয়েছে ।আমি বা তুমি বলে কিছু নেই ।হয় সবই আমি ।আমিময় নাতো শুধুই তুমিময় ব্রহ্মান্ড ।
দেখা যাক উপনিষদ কি বলছে ।শাঙ্খ দর্শন বলছে আমরা যা কিছুই দেখি শুনি বা অনুভব করি তা গতি ও বস্তুর সমষ্টিমাত্র ।
শাঙ্খ দর্শনে পরমাণু প্রাথমিক মৌলিক কনা সমূহের ধারনাকে ভ্রান্ত মনে করে।
তা সেকেন্ডারি বা টারসিয়ারি স্তর বলা চলে ।মূল বস্তু বা ম্যাটার সমষ্টিগতভাবে তৈরী করেছে পরমাণু ।আধুনিক অনুসন্ধান ইথার তরঙ্গের হদিশ দেয় যা বলা হয় পরমাণু দ্বারা সৃষ্ট ।কিন্তু …
কিন্তু ইথারে ভাসমান পরমাণু গুলির মধ্যেও রয়েছে শূন্যস্থান ।এই শূন্যতা ভরবে কিসে? ইনফিনিটি বা অসীমের উৎপত্তি সেখানেই।
প্রকৃতি অজেয় তার সীমাবদ্ধতাই পচন ডেকে আনতে পারে।
কেন্ উপনিষদ ও এক গভীরতর ইনটেলিজেন্স বা মেধা সত্ত্বার উপস্থিতি স্বীকার করে নেয় ।একটি ভাইটাল ফোর্স যা জৈবিক শক্তিগুলিকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে ।ষড় ়রিপুর কাজ করিয়ে নিচ্ছে ।অর্থাৎ সেই অন্তঃপুরেই বাস অচিন শক্তির ।
Nuclear physics এর আলোকে জড়বাদ অকার্যকর বলে জানাচ্ছেন হাইনেসবার্গ ।” প্রাথমিক ধারনার স্তরে পরিবর্তন আনাটা জরুরী। ডেমোক্রিটাসের আণবিকদর্শন তত্ত্ব খারিজ করে প্রাথমিক সামঞ্জস্যসমূহের ধারনাকে যা প্লেটোর সমতাধর্মী (ideas of symmetry) দর্শনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে “(হাইনেসবার্গ,American Review 1974).
কয়েকহাজার বছর আগেই যা ভারতবর্ষ এই সত্যকে উপলব্ধি করে। অধিকাংশ বৌদ্ধ দর্শনেই এ কথা বলা হয় চারিদিকে পরিদৃশ্যমান যে জগত তার পশ্চাতে কিছু আছে কিনা তা অনুসন্ধান করার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই । আত্মা একটি বস্তু আছে তা মানবার আবশ্যকতা কি?এই শরীর ও মনরূপ যন্ত্র স্বতঃসিদ্ধ এটুকুই কি যথেষ্ট নয় ?
ভারতে ইসলামী বুদ্ধিজীবিদের থেকে কুসংস্কারমুক্ত জ্ঞান বেড়িয়ে আসেনি সেই কারণে জাকির নাইকের মতো মধ্য মেধার ফেরিওলার বলা অর্ধসত্যগুলো অনুগামী সৃষ্টি করতে পারে । আত্মপোলব্ধি,আত্মানুসন্ধান দ্বৈত সত্ত্বার বৈপরীত্যর সঙ্গে লড়াই করা প্রায় সব ধর্মেরই মূল কথা দেখা যাচ্ছে ।
এর সর্বোত্তম উত্তর পাওয়া যাবে হজরত মহম্মদের কথা থেকে ,_____” মহত্তম জিহাদ হচ্ছে নিজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ।নিজের মধ্যেকার দিকগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করা ।”
বৈদিক ধর্মের অন্তত দের হাজার বছর পর ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন ।স্বাভাবিক তা আরো পরিশীলিত ।তবু তার নির্যাস বেনোজলে চাপা পড়ে গেছে। ভারতবর্ষ বাস্তবতার অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় ়আজ থেকে চার হাজার বছর আগে পদার্থ নামক তার চিত্তাকর্ষক বিষয়টি নিয়ে । কঠোপনিষদ এই ব্যাপারে আধুনিকতম সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে ব্রহ্মকে ‘ সত্যম,জ্ঞানম অনন্তম ‘ বলে উপস্থাপিত করা হয়েছে ।ব্রহ্মানুভূতি যা নিজ হৃদমাঝারেই ঘটে থাকে ।জীবনকে পরিপূর্ণতা দান করে ।
বৃহদারণ্যক উপনিষদে শঙ্করাচার্য প্রকাশ করেছেন তাঁর সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞানদীপ্ত ভাষ্যে ।
মানবশক্তি সম্পদ ‘সুক্ষ্ণতা,অপরিমেয়তা এবং আত্মার অন্তর্মুখীনতা(প্রত্যগাত্মভূতাশ্চ)___এই ঊর্ধ্ব ক্রমিক স্তরবিন্যাসে সংগঠিত ।প্রথম স্তর নিহিত পেশীশক্তিতে যা স্থুল ও বাহ্যিক ।দ্বিতীয় স্তরে শক্তি নিহিত স্নায়ুতে যা আরো সূক্ষ্ণ ও অভ্রভেদী ।পেশীর পেছনের স্নায়ুগুলো ছিন্ন হলে পেশীর মৃত্যু ঘটে ।
পরবর্তী স্তর মানব মন __” মেধা” যা আরো সূক্ষ্ণ ,ব্যাপক ও অন্তর্মুখী ।এই শক্তিই মানবকে তার আদিম পেশী শক্তি থেকে বৃষক্ষমতা ,অশ্বক্ষমতায় উন্নিত করতে সাহায্য করে ।(কঠোপনিষদ) এতয়েব নাস্তিকবাদ বা যা দেখি আর শুনি সত্যই সত্যনয় ।নাস্তিক সেই যে নিজেকেই ,নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে ।
‘ ন চ প্রত্যক্ষম্ অনুমানেন বাধিতুম শক্যতে
ন চ পদার্থ স্বভাবো নাস্তি ,
নহি অগ্নেঃ উষ্ণ স্বাভাবাম্ অন্য নিমিত্তম ্
উদকস্য বা শৈত্যম ‘
(বৃহদারণ্যক উপনিষদের শাঙ্কর ভাষ্য)
ব্যক্তির অজ্ঞতা তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনা ।যেমন জোনাকি পোকাকে কেউ আগুন ভাবতেই পারে কিন্তু ভিন্নতর সত্য অন্য উপায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে ।সুতরাং বাস্তব অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন প্রত্যয়কে সিদ্ধান্ত খারিজ করতে পারেনা।(স্বামী বিবেকানন্দ)
স্নায়ুবিজ্ঞানী গ্রে ওয়াল্টার তাঁর “The Living Brain” গ্রন্থে আধুনিক স্নায়ুবিদ্যার সাম্যাবস্থার (homeostasis) ধারণাকে যোগ,নির্বাণ ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক অবস্থার শারীরবৃত্তীয় সমতুল বলে মনে করেন ।
বাহ্যজগত যেমন জড়বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মন ,চেতনা ও তার রহস্যের উন্মেষে সহায়ক আধাত্মবিজ্ঞান ।
জড়বিজ্ঞান শেখানে স্থির আধ্যাত্মবিজ্ঞান অনিশ্চিত ,তা ক্রম পরিবর্তনশীল উত্তরণ করে পদার্থ বিজ্ঞান ,রসায়ন বা স্নায়ুবিজ্ঞানকে ভিত্তি করে ।
সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে দেহতেত্ত্ব যেমন বলছে, ভূ, ভুর্ব, স্বং এই ত্রিলোকের মধ্যে যত প্রকার জীব,নদনদী, সমুদ্র পর্বত,ঋষি,দেবতা,গ্রহ,নক্ষত্র সকলই আছে সূক্ষ্ম রূপে দেহমধ্যে ।পৃথিবী,জল,অগ্নি,আকাশ ও বায়ু এই পঞ্চভূতেই অধিষ্ঠান করে। পঞ্চভূতেই শরীর নির্মাণ অর্থাৎ, সমস্ত শত্রু, শোণিত, মজ্জা, অস্থি মেদ ও ত্বক সমস্ত ধাতু,এবং ক্ষুধা তৃষ্ণা সব শরীর ধর্ম।
“শনি শুককুল বীজরূপে এক
‘আর আসত খাকবাদে চারের মধ্যে এক”
দেহতেত্ত্বর সাংকেতিক ভাষা না জানলে মানে বোঝা কঠিন।শনি বলতে শোণিত বা ঋতুমতী নারীর রজঃ আর শুককুল অর্থাৎ পুরুষ শুক্রকে বোঝানো হলো।এই সার সত্য।
আবার লোকায়ত দর্শন অনুযায়ী
“প্রমাণেষু প্রত্যক্ষং শ্রেষ্ঠং “,অর্থাৎ প্রত্যক্ষই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ অনুমান নয়।লোকায়ত দর্শন বৈদান্তিকতার বিরুদ্ধে এক তীব্র চ্যালেঞ্জ।লোকায়ত দর্শনের প্রবর্তক বলা হয়ে থাকে তাই একে বার্হস্পত্য দর্শনও, বলা হয়।শঙ্করাচার্যের মতে “চৈতন্যময় দেহই আত্মা”। লোকায়ত দর্শন প্রজন্ম, মোক্ষ প্রভৃতি তত্ব মানে না। logical positivist বা জড়বাদী দর্শনও বলা হয় লোকায়ত দর্শনকে।এই দর্শনের প্রতিভাস আউল,বাউল-কর্তা মজা,মরমিয়া, সুফি,মহাযানী,বলাহাড়ী প্রভৃতি সম্প্রদায়।পাস্চাত্যদেশেও সমান জনপ্রিয় যা সাধারণ লোকের সহজ দর্শন।
“ণ স্বর্গ নান বর্গো বা
নৈবাত্মা পারলৌকিক:
নৈব বর্ণাশ্রমাদীনং
ক্রিয়াশ্চ ফলদায়িকা”
অর্থাৎ স্বর্গ যদি কোথাও থাকে হেথায় যেটা মানবজমিন।
যত মত তত পথ।ঈশ্বর লাভের বা লোকায়ত ধর্মের। হিন্দু ধর্ম মানুষকে তার নিজ নিজ পথে চলার জন্য সামনে রেখেছে অনেক তত্ত্ব তাই ঈশ্বর সাধনার আগে ,নাস্তিকতার আগে “নিজেকে জানো,নিজেকে চেনো”
নিজের অশুভ সত্তাকে দমন করে নিজের সৌন্দর্য বিকশিত হোক ।সেই তো প্রকৃত ঈশ্বর সাধনা]
Leave a Reply